ABOUT AUTHOR

test

??? ???????

Post Top Ad

Your Ad Spot

Tuesday, June 20, 2017

এমডিজি :বাংলাদেশের অর্জন

ড. আব্দুল মোমেন
২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ইং ০০:০০ মিঃ

২০১৫ সাল বিশ্ব নেতৃত্ব ও জাতিসংঘের জন্য একটি ঐতিহাসিক ঘটনাবহুল বছরবিশেষ। নানা কারণে এ বছরটি বৈশ্বিক ইতিহাসের এক স্মরণযোগ্য অধ্যায়। এ বছর জুড়ে আমরা দেখেছি মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি, ভয়াবহ উগ্র মৌলবাদী জঙ্গি হামলায় সিরিয়া-ইরাক এবং আফ্রিকার উল্লেখযোগ্য অংশ জুড়ে মানবতার অবমাননা, প্রত্নতাত্ত্বিক পুরকীর্তি ধ্বংস, ইউরোপ-আমেরিকায় অর্থনৈতিক মন্দা, ভয়াবহ অভিবাসী সংকট, চীনের জিডিপির আকস্মিক উত্থান-পতন। আবার ঠিক তেমনি এ বছরেই আমরা দেখেছি দক্ষিণ এশিয়ার এক উন্নয়নকামী রাষ্ট্র বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি। বৈশ্বিক মন্দার মাঝেও জিডিপির প্রবৃদ্ধি গড়ে ৬.৩ শতাংশের ওপরে থাকার বিস্ময়কর চমক। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অর্জনের ক্ষেত্রে দেশটির সাফল্য কেবল দক্ষিণ এশিয়াতেই নয়, সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। এসবের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির সর্বশেষ প্রমাণ— মাত্র কয়েকদিন আগেই (২০১৫’র ১৩ অক্টোবর) জাতিসংঘ আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ভূষিত করল অত্যন্ত সম্মানজনক Champions of the Earth পুরস্কারে। এ ছাড়াও ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন্স ইউনিয়ন তাকে আইটিইউ পুরস্কারে সম্মানিত করবে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর জন্য। শাবাশ বাংলাদেশ, জয়তু বাংলাদেশের জনগণের নেতা শেখ হাসিনা।

এ বছরের জুলাই মাসে ‘আদ্দিস আবাবা অ্যাকশন এজেন্ডা’ (Addis Ababa Action Agenda— AAAA) গৃহীত হয় এবং জাপানের সেন্দাইতে বৈশ্বিক দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকরণ কন্ফারেন্স আয়োজিত হয়েছে এবং এ বছরেই প্যারিসে জলবায়ু পরিবর্তনের আবশ্যক বিধিমালা প্রণীত হতে চলেছে।
বাংলাদেশসহ আরও বেশ কিছু দেশের সাফল্যগাথার ওপর ভর করেই জাতিসংঘ আগামী ২৫-২৭ সেপ্টেম্বর গৃহীত ২০১৫-উত্তর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (Sustainable Development Goals—SDG) গ্রহণ করতে চলেছে। এই লক্ষ্যমাত্রার উদ্দেশ্য হচ্ছে আরও জনবান্ধব, পরিবেশবান্ধব, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সমতাভিত্তিক শান্তি ও উন্নয়ন সকলের জন্য সমতার ভিত্তিতে নিশ্চিত করা যেখানে কেউই পিছিয়ে থাকবে না। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ২০১২ সালে জাতিসংঘে উপস্থাপিত ‘জনগণের ক্ষমতায়ন’ (‘Peoples Empowerment’) মডেলের মূল প্রতিপাদ্যও কিন্তু ছিল তা-ই। এ কথা আজ বিশ্ববিদিত যে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সেই ‘জনগণের ক্ষমতায়ন’ মডেলকে জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্র ঐকমত্যের ভিত্তিতে ২০১২ সালে সাধারণ পরিষদে গ্রহণ করেছে।
বিশ্বব্যাপী এমডিজি অর্জনের এ সকল চিত্রের মধ্যে আশার কথা এবং ব্যতিক্রম হচ্ছে বাংলাদেশ। ১৬০ মিলিয়ন জনগোষ্ঠী, সর্বাধিক ঘনত্বের জনবসতি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার ক্ষেত্রে অতি সীমিত সম্পদের দেশ, বিশ্বের সর্ববৃহত্ স্বল্পোন্নত দেশ, বাংলাদেশ। তবে সেই দেশই আজ সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা উন্নয়নে বিশ্বের চমক।

একসময়ে পশ্চিমা বিশ্বের পণ্ডিতেরা যাকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে দেশটি টিকবে কি না সেই প্রশ্ন তুলে ব্যঙ্গ করেছিল, সেই সমালোচনা আর ভ্রুকুটির উচিত জবাব দিয়ে আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রগাঢ়, বিচক্ষণ ও গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ দারিদ্র্য দূরীকরণে শুধু সফলই হয়নি, ১৯৯১ সালের ৫৭.৬% থেকে তা ২০১৫তে ২৪.৪%-এ নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে, যা পৃথিবীর অনেক দেশের পক্ষেই ব্যাপক ভাবনার বিষয়। দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। নানাবিধ সামাজিক সুরক্ষামূলক কার্যক্রমের দ্বারা বাংলাদেশ এ অর্জনে সক্ষম হয়েছে। দারিদ্র্যের আনুপাতিক হার ১৮.৫% থেকে ৬.৫%-এ নেমে এসেছে। বর্তমানে অতি দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে এমন জনগোষ্ঠীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ১২%; যা ২০২১ সালের মধ্যে শূন্যতে নেমে আসবে বলে বাংলাদেশ আশা করে।

জাতিসংঘের এমডিজির বহু আগেই বাংলাদেশ এ লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে বলে আমরা আশাবাদী।
সমতার ভিত্তিতে শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রশংসনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে (এমডিজি-২)। স্কুলে ভর্তির নিট হার বেড়ে ৯৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ঝরে পড়ার হারও কমেছে । এখন ছেলেদের তুলনায় বেশি মেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে। কন্যাশিশুদের স্কুলে যাওয়া নিশ্চিতকরণে সরকারের নানাবিধ উদ্যোগের ফলেই এটি সম্ভব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সবগুলো প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারিকরণ করেছেন (শুধু ২০১৩ সালেই ২৬,১৯৩টি স্কুল সরকারি করা হয়েছে)। সেই সাথে ১ লক্ষ ৪ হাজার ৭৭৬ জন প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি জাতীয়করণ করা হয়েছে। তার গতিশীল নেতৃত্বে ও যথাযথ দিকনির্দেশনার কারণে ২০১৫ সালের প্রথম দিনেই (১ জানুয়ারি) বিনা পয়সায় ৩২৬ মিলিয়ন বই শিশুদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। শিশুদের জন্য সরকার প্রধানের এ এক চমকপ্রদ উপহার। দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক করা হয়েছে এবং ছাত্রীদের জন্য বিশেষ বৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিদ্যালয়ে সরকারিভাবে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে যার দ্বারা ঝরে পড়ার হার ব্যাপক হারে কমে এসেছে।

এমডিজি-৩ হচ্ছে নারীর ক্ষমতায়ন সংক্রান্ত লক্ষ্যমাত্রা। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি ব্যাপক। মেয়েদের স্কুলে ভর্তির হার প্রাথমিকে ৫১ শতাংশ এবং মাধ্যমিকে ৫৩ শতাংশ, যা ছেলেদের তুলনায় বেশি (যথাক্রমে ৪৯ এবং ৪৭ শতাংশ)। কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হওয়াতে মেয়েদের চাকরির হার দশের নিচ থেকে বেড়ে এখন ৩৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। দেশের সর্ববৃহত্ শিল্প খাত, তৈরি পোশাকে যে বিশাল শ্রমগোষ্ঠী কাজ করছে, তাদের ৯৩ শতাংশই নারী। সরকারি চাকরিতে নারীদের জন্য ১০% কোটা সংরক্ষণ করা হয়েছে। ফলে প্রজাতন্ত্রের কর্মবিভাগে ও ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে নারী কর্মকর্তার সংখ্যা আগের চাইতে বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর থেকে শুরু করে সিটি করপোরেশনের মেয়র, বিচারপতি, সরকারের সচিব, রাষ্ট্রদূত, পুলিশ বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, সেনা-নৌ-বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা সকল পর্যায়েই নারীরা কাজ করছেন।

শিশুমৃত্যু হ্রাসকরণ সংক্রান্ত সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এমডিজি-৪-এর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন অত্যন্ত সাফল্যজনক। ৭২ শতাংশ শিশুমৃত্যুহার রোধে সক্ষম হয়েছে দেশটি। তাই ২০১২ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘের এমডিজি-৪ পুরস্কার অর্জন করে। একই সাথে এমডিজি-৫ (মাতৃমৃত্যুহার হ্রাসকরণ)-এর ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে। ১৯৯০ সালে যেখানে প্রতি হাজারে ৫৭৪ জন প্রসূতি মায়ের মৃত্যু ঘটতো, সেখানে ২০১৩ সালে সে হার ১৭০-এ নেমে এসেছে (প্রায় ৭০ শতাংশ কম)। প্রশিক্ষিত ধাত্রীর মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের হার প্রায় আটগুণ বেড়েছে। বিকল্প সেবাযত্নের হার বেড়ে ২০১৪ সালে ৭৯ শতাংশে এসেছে ।
এসব অর্জন হঠাত্ ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা নয়, বরং জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সুদূরপ্রসারী কর্মোদ্যোগের কল্যাণেই সম্ভব হয়েছে। সারা দেশে ১৩,৮০০টি কমিউনিটি হেলথ্ ক্লিনিক স্থাপনের মাধ্যমে অত্যন্ত অগ্রাধিকারের সাথে তিনি এ কাজ বাস্তবায়ন করেছেন। দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় বিস্তৃত এসব ক্লিনিকে চিকিত্সক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়োগ, সেবা প্রদান এবং তথ্য-প্রযুক্তির সর্বাত্মক সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা, বিশেষত গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের সেবা নিশ্চিত করেছেন তিনি, যার সুফল আজ পাচ্ছে তৃণমূলের বাংলাদেশ। এর স্বীকৃতিও পেয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৩ সালে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে প্রযুক্তির উদ্ভাবনী প্রয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সম্মানজনক ‘সাউথ-সাউথ পুরস্কারে’ ভূষিত হন। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে যে ১৩টি দেশ এমডিজি-৫ অর্জনে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ তাদের অন্যতম।

যদিও বেশিরভাগ এমডিজি লক্ষ্য আমরা অর্জন করতে পেরেছি, তথাপি এসব সাফল্য ধরে রাখার ক্ষেত্রে আশঙ্কা ও সংশয় রয়েই যাচ্ছে। কারণ বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ব্যাপক ঝুঁকির মুখে রয়েছে। যদি সমুদ্রসীমার পানির উচ্চতা ১ মিটার বৃদ্ধি পায় তাহলে আমাদের দেশের ২০ থেকে ৩০ মিলিয়ন জনগোষ্ঠী বাস্তুচ্যুত হবেন এবং অর্থনৈতিক উপার্জনক্ষমতা হারিয়ে সর্বস্বান্ত হবেন। পৃথিবীর অন্যতম জনবহুল দেশ হওয়াতে এ বিপুলসংখ্যক বাস্তুচ্যুত মানুষকে কোনো আশ্রয় দেয়ার উপায়ও বাংলাদেশের থাকবে না। তাই যে সকল দেশ বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী তাদের উচিত হবে বাংলাদেশের মতো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোকে এ ক্ষেত্রে অধিকতর সহযোগিতা করা, জলবায়ু-অভিবাসী বা Climate-Migrant জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে তাদের নীতিমালা পরিবর্তন করা, ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোতে পরিবেশ সংরক্ষণে আর্থিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা আর সর্বোপরি তাদের স্ব স্ব রাষ্ট্রের দূষণ ও কার্বন নিঃসরণের মাত্রা ব্যাপক হারে কমিয়ে আনা। এ ব্যাপারে তাদের বিশ্বব্যাপী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে, যার কোনো বিকল্প নেই। তাছাড়া এটা নিতান্ত প্রয়োজন যে, যারা জলবায়ু উষ্ণতার জন্য দায়ী, তাদের দায়িত্ব নিতে হবে। উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন করার দায়িত্ব তাদেরই নিতে হবে।
জলবায়ুর ঝুঁকির হ্রাসকরণ সংক্রান্ত সেন্দাই সম্মেলনে জানানো হয়েছে যে, প্রতিবছর শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেই সারা বিশ্বে ১.৭ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। ২০১২ সালে নিউইয়র্কে ‘স্যান্ডি’ নামক ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাসের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের একার ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৬৫ বিলিয়ন ডলারে। আমেরিকার মতো বৃহত্ শক্তির ও অর্থনীতির দেশের এ দশা হলে এহেন দুর্যোগে বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশগুলোর কী হাল হতে পারে তা বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়। বাংলাদেশে দুর্যোগের কারণে প্রতিবছর জিডিপির ২ শতাংশ অর্থ খরচ করতে হয়, তুল্য বিচারে যা অনেক। কাজেই দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবিলা আর উন্নয়নচিন্তা এক ও অভিন্ন সূত্রে গাঁথা, অন্তত বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা ব্যাপক হারে প্রযোজ্য। সুতরাং সেভাবেই বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে তৈরি হতে হবে, তা না হলে এমডিজি লক্ষ্য পূরণে যে সফলতা এসেছে, তা ধরে রাখা যাবে না।

এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পাশাপাশি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক এবং আর্থ-সামাজিক সূচকেও ব্যাপক অর্জন করেছে, বিশেষত গত কয়েক বছরে। টানা ছয় বছর ধরে গড়ে ৬.৩ % প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশ পৃথিবীকে বিস্মিত করেছে। আজ বিশ্বে চীনের পর বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে থেকে অন্যতম গার্মেন্টস রপ্তানিকারক দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। সার্বিক অর্থনীতির আকার ২০০৬ সালে যেখানে ছিল মাত্র ১০.৫ বিলিয়ন ডলার, সেখানে ২০১৪ সালে তা এসে দাঁড়িয়েছে ৩২ বিলিয়ন ডলারে। বিদেশ থেকে প্রেরিত রেমিট্যান্স ২০০৬ সালে যেখানে ছিল ৫.৪ বিলিয়ন ডলার, সেখানে ২০১৫ সালে তা ১৪.৯ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ২০১৫ সালে সাত গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২৫ বিলিয়ন ডলার (২০০৬ সালে যা ছিল মাত্র ৪.৩ বিলিয়ন ডলার)।

খাদ্য উত্পাদনে চমকপ্রদ সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। অতীতে বছরের পর বছর যে দেশ খাদ্য ঘাটতির মধ্যে ছিল সেই দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
মাথাপিছু আয় আজ বেড়ে ১,৩১৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। সার্বিকভাবে জাতীয় অর্থনীতির চিত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে, তাই বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি বাংলাদেশকে নিম্ন আয়ের থেকে ‘নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ’-এর কাতারে স্থান দিয়েছে। বিশ্বব্যাংকের পাশাপাশি আমেরিকার প্রভাবশালী ম্যাগাজিন ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, দ্রুত মানব উন্নয়নের সাফল্যের জন্য বাংলাদেশকে আখ্যা দিয়েছে ‘দক্ষিণ এশিয়ার মানদণ্ডের ধারক’ হিসেবে। এ স্বীকৃতিকে বাংলাদেশ ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর। ২০২১ সালের মধ্যে আমরা ‘মধ্যম আয়ের দেশ’ এবং ২০৪২ সালের মধ্যে ‘উন্নত দেশ’ হিসেবে বিশ্বের বুকে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্য স্থির করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বে সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিপথ কখনোই মসৃণ ছিল না। নানান চড়াই-উত্রাইয়ের মধ্য দিয়ে পার হতে হয়েছে আমাদের এই বিপুল জনগোষ্ঠীর অর্থনীতিকে। স্বল্প আয়তনের দেশে ১৯৭১ সালের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতি নিয়ে কোটি কোটি মানুষের মুখে খাবার তুলে দেয়াই বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। সকলের জন্য অন্ন আর বস্ত্রের সংস্থান করার যে সংগ্রামী জাতীয় জীবন আমাদের ছিল তা এখন অতীত। এখন পৃথিবীর সর্বত্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পরে মানুষ চলছে। সেই দেশটির উন্নয়নের যে স্বপ্ন আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেখেছিলেন, তা আজ সত্যি হওয়ার পথে। আর সেটি বাস্তবায়িত হচ্ছে তারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে। দক্ষিণ-পুর্ব এশিয়ার যে দেশগুলো বিগত চার দশকে বিস্ময়কর উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছে, যেমন সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন—এদের সকলেরই একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য আছে। এ সবগুলো দেশই দীর্ঘ সময় ধরে স্থিতিশীল সরকার এবং একটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে পথ চলেছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। গত ছয় বছর ধরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে স্থিতিশীল একটি সরকার বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছে মূলত এ কারণেই জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়েছে। শুধু তাই নয়, তার গতিশীল ও স্থিতিশীল নেতৃত্ব বাংলাদেশকে একটি মানব উন্নয়নের মডেল হিসেবে বিশ্বের বুকে পরিচিতি দিয়েছে। সেই সাথে দেশে এসেছে অর্থনৈতিক অগ্রগতি। বেড়েছে শ্রমশক্তির মর্যাদা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ব্যাপক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, বেড়েছে শিক্ষায় নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ (ক্ষেত্রবিশেষে মেয়েদের বেশি), কমেছে সামাজিক ও লিঙ্গ বৈষম্য এবং বেড়েছে জীবনযাত্রার মান ও জীবনাকাঙ্ক্ষা। আমাদের মহান স্বাধীনতার পঞ্চাশতম বর্ষে, ২০২১ সালের মধ্যে, মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের লক্ষ্য নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে দেশকে নিয়ে চলেছেন সম্মুখপানে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ অর্জনে এভাবেই তার নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ প্রয়াস এবং দেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন কেবল স্বপ্ন নয়, বরং উজ্জ্বল সম্ভাবনার এক বাস্তব সত্য। এ স্বপ্ন দেশে এবং সারা বিশ্বে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের মাঝে স্ফুরণ ঘটাবে এক নতুন দেশাত্মবোধ ও জাতীয় চেতনার। মালয়েশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদ বা সিঙ্গাপুরের লি কুয়ান ইউ যেভাবে তাদের দেশকে নিয়ে গেছেন বিশ্বের প্রথম সারিতে, সেভাবে আমাদের জাতীয় নেতা দেশরত্ন শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে নিয়ে যাবেন সেই কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের লক্ষ্যে। সৃজন করবেন নতুন এক ইতিহাস। বাংলাদেশ হবে নতুন এক সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ। জাতির পিতার স্বপ্নের সেই সোনার বাংলাদেশ।
 লেখক :জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad

Your Ad Spot

???????